Wednesday, December 25, 2013

Nawab Mukunda Adhikary

নবাব মুকুন্দ অধিকারী

প্রসেনজিৎ চৌধুরী

দুটো চপ আর এক ঠোঙা মুড়ি, কাঁচা লঙ্কাটা মাঝে দেখাই যাচ্ছিলনা। এখন আবার উঁকি মারে।
তাই খেয়েই হাঁক পাড়েন নবাব বাহাদুর....ওরে স্বপন, চা দিয়ে যা ।
পেতলের গ্লাসে চা আসে, একটু বেশিই চিনি খান নবাব জঙ্গ সাহেব।
রাজত্ব গিয়েছে অনেকদিন। তবুও হুকুমদারিটা রয়ে গিয়েছে। আর রয়ে গিয়েছে গ্লাসটা, বৃদ্ধ নাবাব বাহাদুরের মতই পুরনো।
নবাব জঙ্গ সাহেবের জন্য এটুকুই ভাল !
সকালটা চপ মুড়ির স্বাদে কেটে গেলেও, বারোটার পর থেকেই পেটটা গোলাতে থাকে। বাসন্তীর মা আসবে, তারপর ভাত বেড়ে দেবে। কাঁসার থালায় ভাত আর পালং শাকের চচ্চড়ি। মাছ থাকলে একটু বেশিই খেয়ে নেন তিনি।
পত্তনি কবে ডকে উঠেছে।
নবাবের কি আর সৈন্য নেই ? আর একটাও যুদ্ধ হবে না ?
কে বলে হবে না - গর্জে ওঠেন নবাব জঙ্গ সাহেব।
এক হুঙ্কারে ডোবার ধার থেকে মাছরাঙাটা উড়ে যায়। উঠোনে বসা পুচুমনি লেজটা আরো গুটিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
নবাব বাহাদুর লাফ দিয়ে তক্তা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়েন....
‘কোথায় সেনাপতি, ভূবনডিহির মাঠে সেনা সাজাও...ঘিরে ফেল...গুঁড়িয়ে দাও ওদের...রক্ষা নাই, রক্ষা নাই, রক্ষা নাই...বদলা নিতে হবে ’...!!
তারপরেই হাঁফানির টানটা বেড়ে ওঠে, দমকা কাশির সঙ্গে কুঁকড়ে যায় লম্বা শরীরটা। কোনওরকমে তক্তার কোনাটা ধরে বসে পড়েন মুকুন্দ অধিকারী।
বাসন্তীর মা দৌড়ে আসে। পেতলের গ্লাসে জল খেয়ে খানিকটা হাঁফ ছাড়েন মুকুন্দবাবু। সুবে বাংলার নবাব জঙ্গ সাহেব।.....

নাটকের সেই স্বাধীন রাজত্ব নেই....স্মৃতির অতলে রয়ে গিয়েছে সংলাপগুলো।
একটা সিগারেট দেবেন ?
বাসন্তীর মায়ের কটমটে ইশারা ধোঁয়ায় উড়িয়ে মুকুন্দ অধিকারী ডুব দেন অতীতে।
‘সে দিন ছিল, হ্যাজাকের আলো-ছায়ায় যুদ্ধের সিন হয়েছিল। সান্যাল বাড়ির মেজকর্তা খুশি হয়ে পঞ্চাশটা টাকা দিয়েছিলেন। গভীর রাতের পালা শেষে খাসির মাংস দিয়ে ভাত। গোগ্রাসে উড়ে গিয়েছিল। কুড়িটা পান্তুয়া খেয়েছিলাম গো।‘…..
কেউ ডাকে না ?
কেন ডাকবে গো। আমি তো বাতিল। ও সব ঝকমারি পার্ট তো বুঝি না। তা ছাড়া কোন উত্তেজনাই নেই। যুদ্ধ নেই, ঝকমকে আলো নেই। ভাল লাগে না।
ঘোলাটে চোখে মুকুন্দ অধিকারী বলে যান তাঁর কথা।..... রাজা বিক্রমাদিত্যের যুদ্ধ, শিবাজীর সংলাপ, মুঙ্গেরের দুর্গে মীরকাশিমের লড়াইয়ের কথা।
জানালার পাশে মাকড়সার ঝুলটা দুলে ওঠে। উঠোনের নিম গাছটার তলা ঝুপসি হয়ে আসছে। নবাব জঙ্গ সাহেব পাড়ি দিয়েছেন স্মৃতির পথে।
তারপর ?
তারপর কিছু নেই....
সব শেষ হয়ে গেল। সান্যালবাবু চলে গেলেন। থিয়েটারটাই বন্ধ হয়ে গেল। মাঝে কয়েকবার সিউড়ি, ময়ূরেশ্বর গিয়েছিলাম। আমার থিয়েটারের গল্প আর কেউ নিতে চাইল না। স্ত্রী আগেই গিয়েছেন। আমি রয়েছি। ভাগ্যি বাসন্তীর মা ছিল।...
মুকুন্দবাবু ফিরে আসেন বর্তমানে।
ও সব কি হবে লিখে ? আমায় আমার মত থাকতে দিন। কেউ নিলনা তো আমার বয়েই গেল।
বিকেল গড়িয়ে আসে। বিড়ি হাতে সংলাপ বলতে থাকেন তিনি....ওরে ওরে বিশ্বাসঘাতক....আমায় মারবি...হা হা হা.....
আবছা অন্ধকারে মিশে যান...নবাব জঙ্গ সাহেব।
আজও ঠিক সময়ে পাস করবে ডাউন সাহেবগঞ্জ লোকাল। আজও ঠিকমত সংলাপ বলবেন মুকুন্দ অধিকারী।

No comments:

Post a Comment